স্বদেশ ডেস্ক:
রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সামরিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এই সহায়তা আর কতদিন থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন শুরু হয়েছে মার্কিন রাজনীতির পরিমণ্ডলে। কারণ যুদ্ধের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টি ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি সমর্থন করলেও দেশের বর্তমান মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিতে এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। পাশাপাশি আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস নির্বাচনে এ ইস্যুটি সামনে আনতে চাইছেন রিপাবলিকানরা। নভেম্বরের নির্বাচনে যদি রিপাবলিকান পার্টি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে সুবিধাজনক অবস্থান গ্রহণে সক্ষম হয়, সেক্ষেত্রে ইউক্রেন সহায়তা প্রদানের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন মার্কিন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের রিপাবলিকানপন্থি কয়েকজন এমপি একই কথা বলেছেন। নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান এমপি ডন ব্যাকন মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস বলেন, ‘মার্কিন জনগণ আর ইউক্রেনকে সহায়তা দিতে আগ্রহী নয়। আপনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুকলেই তা বুঝতে পারবেন।’ নর্থ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যের এমপি কেলি আর্মস্ট্রং অ্যাক্সিওসকে বলেন, ‘দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ; বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম দ্বিগুণ হয়েছে… আপনি যদি একটি বৃহত্তর কমিউনিটি হন এবং প্রতিনিয়ত যদি আপনাকে অভিবাসী ও অভ্যন্তরীণ নানা সংকট নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয়, সেক্ষেত্রে ইউক্রেন ইস্যু এই মুহূর্তে আপনার জন্য প্রাসঙ্গিক নয়।’ ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ইউক্রেন। তার আগ পর্যন্ত এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য ছিল। তবে স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটিতে বসবাসরত সংখ্যালঘু রুশদের সঙ্গে জাতিগত দ্বন্দ্ব শুরু হয় ইউক্রেনীয়দের।
দীর্ঘ চার বছর টানাপড়েন চলার পর অবশেষে চলতি বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। গত ৯ মাসের অভিযানে ইতোমধ্যে খেরসন, জাপোরিজিয়া, দোনেৎস্ক ও লুহানস্কÑ ইউক্রেনের এই চারটি প্রদেশ নিজেদের সীমানাভুক্ত করেছে রাশিয়া। শতকরা হিসেবে দেশটির মোট ভূখণ্ডের র তুলনায় এই চার প্রদেশের আয়তন ১৫ শতাংশ।
যুদ্ধের শুরু থেকেই ইউক্রেনকে আর্থিক ও সমরাস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা। ইউরোপের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার পরিমাণ অবশ্য অনেক বেশি। গত ৯ মাসে ইউক্রেনকে শত শত কোটি ডলারের সহায়তা দিয়েছে রাশিয়ার চির প্রতিদ্বন্দ্বী এই দেশটি।
রিপাবলিকান পার্টির স্টাডি কমিটির চেয়ারম্যান ও যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের এমপি জিম ব্যাঙ্কস অ্যাক্সিওসকে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি বাইরের সমস্যা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার আগে নিজের ঘরের সমস্যার সমাধান জরুরি। আমাদের প্রধান সমস্যা এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ।’
রিপাবলিকান পার্টির এই অবস্থান অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। মার্কিন সাংবাদিকরা হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ও মুখপাত্র ক্যারিন জেন-পিয়েরেকে বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে ক্যারিন জোর দিয়ে বলেন, ‘ইউক্রেন ইস্যুতে বাইডেন প্রশাসন আগের মতোই কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে কাজ করে যাবে এবং যতদিন এই যুদ্ধ চলে, ততদিন (ইউক্রেনকে) সহায়তা দেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অবশ্য কিয়েভের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রিপাবলিকান পার্টি জয়ী হলে যে কোনো সময় সহায়তা বন্ধ হতে পারে এ সম্পর্কে তারা সচেতন।